জাতীয় মুক্তি-সংগ্রামে শিল্প : চীনের কাঠখোদাই
এক
আধুনিক জার্মানীর বোধহয় সবচেয়ে বড় শিল্পী ছিলেন শ্রীমতী কেটি কোল্ভিজ—নিজের শিল্পীজীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যিনি ছবি এঁকে নির্মম সততার সঙ্গে প্রকাশ করে গেছেন অত্যাচার আর অবিচারের বিরুদ্ধে জার্মান জনতার সংগ্রামের কথা শোষকশ্রেণীর বিরুদ্ধে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি কাল ধরে জার্মানীর সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের প্রতিরোধের ইতিহাস কেটি কোল্ভিজ-এর কাঠখোদাই-এচিং-লিথোগ্রাফ ইত্যাদিতে বিবৃত হয়ে আছে। কোল্ভিজ ছিলেন প্রধানত গ্রাফিক-শিল্পী—সামাজিক অত্যাচারের স্বরূপ উদ্ঘাটন আর তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড প্রতিবাদ হিসেবে শিল্পকে ব্যবহার করা—এই ছিল তাঁর শিল্পীজীবনের লক্ষ্য। এবং এর জন্য তাঁকে মূল্য দিতে হয়েছিল, নিজের জীবনের মূল্য। কোল্ভিজ, কমিউনিস্ট ছিলেন না, কিন্তু তাঁর মহৎ শিল্পীজনোচিত সততা তাঁকে এনে দাঁড় করিয়েছিল হিট্লারী-নাৎসীবাদের বিরুদ্ধে একেবারে সামনের সারির সৈনিকদের দলে। ফলে, প্রথমে জার্মান, অ্যাকাডেমি অফ্ আর্টস থেকে তিনি বহিষ্কৃত হন। পরে তাঁর রচনার প্রদর্শনী একেবারে বে-আইনী করে দেওয়া হয় নাৎসী পুলিসের খানাতল্লাসী লেগেই ছিল তাঁর স্টুডিওতে। শেষ পর্যন্ত, অনিবার্যভাবেই বন্দিনী হলেন কনসেনট্রেশন ক্যাম্প-এর কাঁটাতারের বেড়াজালে ৷ সেখানেই দীর্ঘকাল রোগভোগের পর তাঁর মৃত্যু হল আটাত্তর বছর বয়সে।
চীনের কাঠখোদাই ছবির কথা লিখতে গিয়ে জার্মান শিল্পী কেটি কোল্ভিজ-এর উল্লেখ করছি কেন?
১৯৩০-এ চীনে যখন জনতার ওপরে চিয়াং সরকারের অত্যাচার চরমে উঠেছে, তখন সাংহাইয়ের একটি চিত্রপ্রদর্শনীতে কেটি কোল্ভিজ-এর কয়েকটি লিথোগ্রাফ আর কাঠখোদাই দেখে আশ্চর্যরকম অনুপ্রাণিত হয়ে ওঠেন আরও অনেকের মধ্যে একজন তরুণ চীনা সাহিত্যিক-শিল্পী জু-শি। জু-শি সঙ্গে সঙ্গে কৃতসংকল্প হয়ে ওঠেন-তিনিও কোল ভিজ-এর মতোই তীব্র আর নির্মম রেখা-রচনার মধ্যে দিয়ে দেশের লোকের কাছে খুলে ধরবেন কুয়োমিনটাং-সরকারের বর্বর স্বরূপ, সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করবেন দেশের মানুষকে সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই সংকল্পকে কাজে পরিণত করতে লাগার পরে জু-শিকে আর বেশিদিন বাঁচতে হয়নি। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি গ্রেপ্তার হন। চিয়াংকাইশেক-এর পুলিশ তাঁকে গুলি করে হত্যা করে উঁচু দেয়াল দিয়ে চারদিক ঘেরা সাংহাইয়ের জেলখানার আঙিনায় ৷
চীন থেকে জার্মানী—কতো দূর, কিন্তু কতো কাছাকাছি! একদিকে শাসক-শোষকগোষ্ঠীর সেই একই পাশবিক কাপুরুষতার স্বরূপ, অন্যদিকে জনতার সংগ্রামের সবচেয়ে বলিষ্ঠ মুখপাত্র হিসেবে সৎ শিল্পীর মহৎ আত্মদানের সেই আশ্চর্য উদাহরণ।
দুই
চীনের আধুনিক কাঠখোদাই-শিল্পের জন্মই হল গণসংগ্রামে শিল্পকে ব্যবহার করার তাগিদে এবং সেদিক থেকে এর জন্মকথাও বিস্ময়কর আর অনন্যসাধারণ। সামাজিক অত্যাচার আর ওপর তলার পরগাছা-শ্রেণীর শোষণের বিরুদ্ধে জনতার নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামে আর প্রতিরোধে আর কোনো শিল্পকলা এতো বড় হাতিয়ারের কাজ করতে পেরেছে বলে জানা নেই। আধুনিক চীনা কাঠখোদাই-শিল্পের সেই সংগ্রামী ইতিহাস যেমন বিস্ময়কর, তার শিক্ষাটাও তেমনি সর্বদেশের সংগ্রামী শিল্পীদের পক্ষে গ্রহণীয়।
চীনের নিজস্ব কাঠখোদাই-শিল্পের ইতিহাস আর ঐতিহ্য দীর্ঘ দিনের। কাঠ থেকে হরফ খোদাই করে প্রথম ছাপা-লেখা প্রচলনের গৌরব প্রাপ্য চীনদেশের—প্রাচীন সভ্যতায়, স,উন্নত সংস্কৃতিতে, পরিণত শিল্পতত্ত্বে যে- মহাচীন মহাভারতের নিকটতম প্রতিবেশী। তারও আগে থেকে কাঠের গায়ে ছবি কুঁদে তুলে তার ওপর কালি ঝুলিয়ে কাপড়ের পর্দায় সেই ছবির ছাপ তোলার রীতি ছিল চীনদেশে। এইভাবে চীনা কাঠখোদাই-শিল্পের ইতিহাসের সূত্র অনুসরণে যাওয়া যায় আজ থেকে প্রায় পনেরো-শো বছরেরও আগে পর্যন্ত। এই দীর্ঘকাল ধরে নিরবচ্ছিন্ন ধারায় বয়ে এসে চীনের এই কাঠখোদাই-শিল্প অর্জন করেছে তার নিজস্ব রূপ-রীতি-আঙ্গিকের বৈশিষ্ট্য। উল্লেখযোগ্য এই যে, এই ঐতিহ্য অনুসারে কাঠখোদাই-শিল্পেও কিন্তু আগাগোড়াই বিষয়বস্তুর দিক থেকে জনতার দৈনন্দিন জীবনের পরিচয় চিত্রিত হয়ে এসেছে। সাধারণভাবে বলা যায়, জনতার জীবনের এতো কাছাকাছি চীনের আর কোনো শিল্প পৌঁছতে পারেনি। এর কারণটা কি? বোধহয় এই যে, চিত্রশিল্পীরা—অর্থাৎ রং তুলি দিয়ে যাঁরা ছবি আঁকেন তাঁরা বরাবরই চীনের সামন্ত-প্রধান সমাজের উচ্চস্থানীয় ধনীদের দ্বারা পৃষ্ঠপোষিত, সেই জন্যে তাঁরা ‘চারুশিল্পী' হিসেবে সম্মানিত। কিন্তু কাঠখোদাই-শিল্পী— যাঁর কারবার কাঠের ব্লক আর খোদাই করার জন্যে, কাঠ-কোঁদার জন্যে নানান ধরণের ছুরি-নরুন-‘বুলি’
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment