আমার দেখা জয়নুল আবেদিন
এক
জয়নুল আবেদিন সাহেবের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় কলকাতার সরকারী আর্ট স্কুলে। তখন দেশ ভাগ হয়নি। ১৯৪৫ সালে আমি প্রথম বর্ষে আর্ট স্কুলে ভর্তি হই এবং শিক্ষক হিসাবে তাঁকে পাই। আর্ট স্কুলে ভর্তি হবার আগেও আমরা অনেকে তাঁকে নামে চিনতাম। ১৩৫০ এর দুর্ভিক্ষের বাস্তব রূপ চিত্রিত করে তিনি কলকাতা শহরে তখন আলোচিত ব্যক্তিত্ব। শহরের রাস্তায় অন্নের খোঁজে কঙ্কালসার মানুষের মিছিল, তাঁদের হাহাকার, মৃত্যুর ভয়াবহতা, তাঁর সপাট রেখা নির্ভর সৃষ্টিগুলোতে বিশিষ্ট রূপে পড়েছিল। জয়নুল আবেদিনের মতো একজন খ্যাতিমান শিল্পীকে শিক্ষক হিসাবে পাওয়া আমাদের অনেকের কাছেই ছিল কল্পনাতীত।
দ্বিতীয়বার জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে আমি ঘনিষ্ট সংস্পর্শ আসি ১৯৫০ সালে ঢাকায় সরকারী আর্ট ইনষ্টিটিউটে ভর্তি হবার সুযোগ লাভ করে। তিনি সে সময় আর্ট ইনষ্টিটিউটের অধ্যক্ষ।
১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভাগের ফলে জয়নুল আবেদিন সাহেব সহ অন্যান্য মুসলমান শিল্পীরা যেমন, সাফিউদ্দিন আহমদ, আনোয়ার উল হক, সফিকুল আমিন, কামরুল হাসান কলকাতা ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানে ঢাকা শহরে বদলি হয়ে যান। এই শিল্পীদের প্রথমে ঢাকায় বিভিন্ন সরকারী স্কুলে চাকরী করতে হয়েছিল। সে এক বিড়ম্বনার ইতিহাস। পরে ঢাকায় আর্ট ইনষ্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা হলে, এঁরা সকলে সেখানে যোগদান করেন। এবং জয়নুল আবেদিনের প্রযত্নে গড়ে ওঠে বাংলাদেশে চিত্রকলা শিক্ষার এক নতুন পরিবেশ ও উৎসাহ।
আমার ঢাকায় আর্ট ইনষ্টিটিউটে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয় জয়নুল আবেদিনর বদান্যতায়। এখানে উল্লেখ্য যে ১৯৪৯-এর শেষ দিকে আরও কয়েকটি ছাত্রর সাথে আমাকেও ছাত্র রাজনীতি করার অভিযোগে কলকাতা সরকারী আর্ট স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। এখানে বিভিন্ন আর্ট স্কুলে ভর্তির সুযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাজনৈতিক কারণে। আমার পৈত্রিক ভিটা ও দেশ ছিল পূর্ব বাংলায় এ অবস্থায় আমি মনস্থ করি ঢাকায় যাবার ও ওখান থেকে শিক্ষা নেবার।
ঢাকায় পৌঁছে অধ্যক্ষ জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে দেখা করি। কলকাতায় আর্ট স্কুলের পরীক্ষা দিতে না পারা ও অন্যান্য ঘটনা তাঁকে জানাই। সহৃদয়তার সাথেই তিনি আমায় ভর্তির এবং শিল্পকলা শিক্ষার সুযোগ করে দেন। ছাত্র হিসেবে তাঁকে খুব ঘনিষ্ঠ ভাবেই আমরা পেয়েছিলাম। আমি পঞ্চম বর্ষের শেষ পরীক্ষায় রেকর্ড নম্বর পেয়েছিলাম তাঁর অধীনে শিক্ষার সুযোগ লাভ করেই। পরীক্ষার পর আমি ঢাকায় থেকে যাই ও ওখানকার শিল্পকলা আান্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি।
দুই
একজন শিল্পীর শিল্প কর্ম অধ্যয়ন করতে হলে সেই শিল্পীর বিভিন্ন পর্বের সৃষ্টি সমূহকে যেমন গণ্য করতে হয়, তারই পাশাপাশি সেই শিল্পীর সময়কালের পরিবেশ, সমাজ সম্বন্ধকেও জানতে হয়।
জয়নুল আবেদিন পূর্ববাংলার ময়মনসিংহের মানুষ, শিল্পকলা শিক্ষার জন্য এসেছিলেন কলকাতায়, ভর্তি হয়েছিলেন সরকারী আর্ট স্কুলে ! আর্ট স্কুলে তখন একাডেমিক পাশ্চাত্য রীতির শিক্ষার প্রচলন ছিল। আবেদিন সাহেব খুবই পরিশ্রমী ও কৃতী ছাত্র ছিলেন। প্রকৃতির নানান বর্ণময় দৃশ্য রচনায়, প্রতিকৃতি বা মুখাবয়ব চিত্রণে, নারী পুরুষের দেহরূপের স্পর্শগ্রাহ্য অঙ্কনশৈলী উপস্থাপনায়, আলো আঁধারের পরিবেশ সৃষ্টির এবং ড্রইং বা রেখাচিত্রের দক্ষতায় তিনি খুবই পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এ ছাড়াও সে সময়কার একাডেমিক পাশ্চাত্য অঙ্কন রীতির ধারক, যেমন হেমেন্দ্র মজুমদার, অতুলচন্দ্র বসু, প্রহলাদ কর্মকার প্রমুখ দেশ-বিদেশ খ্যাত শিল্পীদের প্রভাবও তাঁর উপরে বর্তায়। এর কারণেই ছাত্রোত্তর ও প্রথম পর্বের সৃষ্টিতে শুধু নয়, উত্তর কালের সৃষ্টি সমূহেও বাস্তবতা, আকারগত ও ড্রইং এর ধ্রুপদী বিন্যাস তাঁর সৃষ্টিতে বিশিষ্টতা নিয়ে আমাদের কাছে আসে।
জয়নুল আবেদিন নিজেকে অবশ্যই একাডেমিক শিল্প রীতিতে আবদ্ধ রাখেন নি। তাঁর জল রংএ আঁকা নদীমাতৃক বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর চিত্র সমূহ, সাঁওতাল পরগনার দুমকার জীবন চিত্রমালা, প্রথাগত অঙ্কনরীতির বাইরে অন্য মাত্রা সংযোজন করেছিল। সৃষ্টিতে দেশজ চরিত্র আরোপের প্রচেষ্টা, লোকায়ত ঐতিহ্য ও রূপসমূহের ব্যবহারের প্রশ্ন, এবং সমসাময়িক আধুনিক শিল্প জিজ্ঞাসা ও
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment