ফ্যাসিবাদ ও যুদ্ধবিরোধী রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের জন্ম কলকাতায় জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে। বাংলার সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি ও স্বাদেশিকচেতনা উন্মেষে যে পরিবার বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। রবীন্দ্রনাথের (১৮৬১-১৯৪১) বয়স যখন পাঁচ বছর, ১৮৬৬ সালে ঠাকুর পরিবারের সুহৃদ, রবীন্দ্রনাথের গৃহশিক্ষক রাজনারায়ণ বসু (১৮২৬-১৮৯৯) কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘জাতীয় গৌরবেচ্ছা সভা’ এবং ‘হিন্দুমেলা’ (১৮৬৭)। পরবর্তী সময় থেকে এ মেলার নামকরণ করা হয় ‘চৈত্রমেলা’। স্বাদেশিকতাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যেই ১৮৭৮ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘সঞ্জিবনী সভা’। কিশোরকাল থেকেই রবীন্দ্রনাথ এসব কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর আত্মপরিচয় গ্রন্থে লিখেছেন:
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈপ্লবিক ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে বৈপ্লবিক সংগঠন ‘সঞ্জিবনী সভা’ নামে একটি গুপ্ত সমিতি স্থাপন করেছিলেন। সমিতির সভাপতি ছিলেন হিন্দুমেলার উদ্যোক্তা রাজনারায়ণ বসু এবং সভ্য ছিলেন নবগোপাল মিত্র ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
‘সঞ্জিবনী সভা’-র কর্মকাণ্ডের কিছু বিবরণ দিয়ে একই গ্রন্থে রবীন্ত্রনাথ লিখেছেন:
জ্যোতিদাদা এক পোড়ো বাড়ীতে এক গুপ্ত সভা স্থাপন করেছেন। একটা পোড়ো বাড়ী তার অধিবেশন, ঋগবেদের পুঁথি, মড়ার মাথার খুলি আর খোলা তলোয়ার নিয়ে তার অনুষ্ঠান, রাজনারায়ণ বসু তার পুরোহিত। সেখানে আমরা ভারত উদ্ধারের দীক্ষা পেলাম।
রবীন্দ্রনাথ সারাজীবন কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত না থেকেও ছোটবেলা থেকে ঠাকুর পরিবারে এক স্বাদেশিক পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। ১৮৮৫ সালে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর ১৮৮৬ সালের ২৮ ডিসেম্বরে কলকাতায় যে দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে নিজের লেখা গান ‘আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’ পরিবেশন করেন। তারপর ১৮৯২ সালের কলকাতা অধিবেশনেও গেয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা ‘বন্দেমাতরম’ গানটি। আরও অনেক অধিবেশনেও তিনি যোগদান করেছেন, গান করেছেন। আর বিংশ শতকের শুরুতে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী যে তুমুল স্বদেশী আন্দোলনের সূচনা হয়, তাতে সশরীরে অংশ নিয়েছেন, গান লিখেছেন ও গান করেছেন। সে সব গান তো পরবর্তী সময়ে বিপ্লবীদের জীবনদানের অস্ত্র হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বিপ্লবী আন্দোলন প্রবল হয়ে উঠলে তিনি স্বদেশী আন্দোলন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। কেননা রবীন্দ্রনাথ কোনোদিন সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেননি। তবে বিপ্লবীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন-নিপীড়নও তিনি সমর্থন করেননি। পরোক্ষভাবে হলেও অনেক সময় তিনি বিপ্লবীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ১৯১৫ সালে বুড়িবালামের যুদ্ধে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘা যতীন)-এর মৃত্যু সংবাদ শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘এতকালের পরাধীন দেশে এ মৃত্যুও ছোট নয়।’ কিন্তু যতীনের সাধনা বলার পর তাঁর ঠোট দুটো কেঁপে কেঁপে থেমে গিয়েছিল। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তো তিনি ঘৃণাভরে ‘নাইট’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
১৯২৯ সালে বিপ্লবী যতীন দাস (১৯০৪-১৯২৯) জেলখানায় ৬৩ দিন অনশন করার পর মারা গেলে রবীন্দ্রনাথ ব্যথিত হয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সহযোগী শান্তিদেব ঘোষ লিখেছেন:
শেষ পর্যন্ত যতীন দাসের মৃত্যু হল। সেই সংবাদ যখন শান্তিনিকেতনে এসে পৌঁছল, সেইদিন গুরুদেব মনে যে বেদনা পেয়েছিলেন, তা ভুলবার নয়। সন্ধ্যায় ‘তপতি’ অভিনয়ের মহড়া বন্ধ না রাখার কথা হল। কিন্তু বারবার তিনি তার পাঠের খেই হারাতে লাগলেন, বহুবার চেষ্টা করেও কিছুতেই ঠিক রাখতে পারছিলেন না, অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মহড়া বন্ধ করে দিলেন। সেই রাত্রেই লিখলেন ‘সার্বখর্বতারে দহ তব ক্রোধদাহ’ গানটি।
কলকাতা, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য স্থানে বিপ্লবীদের ওপর যে নিপীড়ন ও নির্যাতন চলছিল সে সম্পর্কেও রবীন্দ্রনাথ অবহিত ছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমার চিত্ত আমার দেশের সঙ্গে প্রবল বেদনায় সম্মিলিত হয়েছে।’ সে বছর অক্সফোর্ডে হিলবার্ট বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্বদেশী ছাত্রদের প্রশ্নের সম্মুখীন হন কেন তিনি এ সময় গান্ধীজির আইন অমান্য আন্দোলনে তাঁর পাশে থাকেননি। তিনি শান্ত ও বিষণ্ন মনে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তোমরা বুঝবে না। কিন্তু গান্ধীজি জানেন আমার নিজস্ব হাতিয়ার নিয়ে একই লড়াইয়ে আমি রয়েছি।’ তারপর তিনি ‘দুঃসময়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেছিলেন।
১৯৩১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হিজলি ও
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment