মামার বিয়ের বর যাত্রী
মেজো মামার বিয়ে। ছোট মামা আর মেজো মামা তাই এসেছেন দাওয়াত দিতে। বাড়ীর সবাই বিয়ের তিন দিন আগে মামা বাড়ী যাবে। শুধু আমিই যেতে পারব না। কারণ আমার পরীক্ষা। হ্যা, মামার যেদিন বিয়ে ঠিক তার আগের দিনই আমার পরীক্ষা শেষ হবে। মানে সতেরোই ডিসেম্বর মামার বিয়ে, আর ষোলই ডিসেম্বর আমার পরীক্ষা শেষ হবে। সুতরাং তিন দিন আগে যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
মেজো মামা পরদিনই চলে গেলেন। শুধু ছোট মামা রইলেন। তিনি বিয়ের তিন দিন আগে সবাইকে (অবশ্য আমি বাদে) নিয়ে যাবেন।
সেদিন খাওয়ার পর ছোট মামার সাথে গল্প করছিলাম।
আমি বলছিলাম: মেজো মামার বিয়েতে এবার আর যাওয়া হল না। ইস কতদিন ধরে বিরিয়ানী যাইনি। এ-রকম চান্সটা মিস হয়ে গেল।
ছোট মামা খানিক চিন্তা করে বলালন: তুই কিন্তু যেতে পারিস।
আমি উৎসাহিত হয়ে উঠলাম: কিভাবে।
: তোর পরীক্ষাতো শেষ হবে যোল তারিখ, আর বিয়ে হল গিয়ে সতেরো তারিখ। সুতরাং…
: আরে রাখ তোমার সুতরাং। তুমি তো বলতে চাও যে, আমার পরীক্ষা যোল তারিখ শেষ হবে, তা'হাল তো সতেরো তারিখে সহজেই যাওয়া যায় মামাবাড়ী। তুমি মনে করেছ্যে একথাটা আমি ভেবে দেখিনি কিন্তু তিনটের পরে তো আর কোন ট্রেন নেই। মানে আমার পরীক্ষা তো শেষ হবে সেই পাঁচটায়। কিন্তু তখন তো আর মামা বাড়ীর কোন ট্রেন পার না। রাত্রিতে সেদিনের কোন ট্রেনই নাই। দিনে মাত্র সাড়ে বারোটা আর তিনটায় এই দুটো ট্রেনই আছে। সুতরাং ষোল তারিখেই পরীক্ষা দিয়ে মামার বাড়ী যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যেতে হলে পরের দিন মানে সাতারা তারিখে সাড়ে বারোটার ট্রেনে যেতে হবে। সেই ট্রেন গিয়ে পৌঁছবে সান্ধ্য সাতটায়। তাহলে আর গিয়ে লাভ কি, কারণ ততক্ষণে তো মামা বরযাত্রীসহ বিয়েতে রওয়ানা হয়ে য্যাবন। যদি মামার সখে বরযাত্রী হয়ে যেতে না-ই পারলাম তবে আর গিয়ে সাতটা কি শুনি?
: উহু, আমি তা বলছি না।
: তবে?
: তুই যদি সোজা কনের বাড়ীতে চলে যাস।
: তার মানে?
: তোর আমাদের বাড়ীতে যাওয়ার আর কি দরকার। তুই সতেরো তারিখে সাড়ে বারোটার ট্রেনে সোজা কনের বাড়ীতে চলে যাবি। তাহাল তুই সেখানে বরযাত্রীদের 'সাথে মিলতে পারবি। আর তাহলে তেজ বিরিয়ানিটাও মিস্ যায় না। কি বলিস?
আমিতো লাফিয়ে উঠলাম 'থ্রি চিয়ার্স ফর ছোট মামা। আমি আনন্দে তাঁর পিঠ চাপড়ে
বললাম: মার্ভেলাস আইডিয়া। এই না হলে আর মামা।
আমি তো আনন্দে লাফিয়ে একেবারে আকাশে যাবার জোগাড় করছি। কিন্তু সেই মুহূর্তে ছোট মামা যে কথাটা বললেন, তাতে আমি আকাশে উঠতে উঠতেই ধপ করে পড়ে গেলাম। তিনি বললেন: কিন্তু একটা কথা কি জানিস ফোকলা?
: কি?
: স্টেশনের নামটাই যে আমার মনে নেই।
: স্টেশনের নাম। কোন্ স্টেশনের?
: ঐ কনের বাড়ী যেখানে সেখানকার স্টেশনের নাম ই ভুলে গেছি।
: এ্যাঁ, স্টেশনের নামই জান না। তবে যাব কি করে? আমাদের বাসার কেউ জানে না?
: না বোধ হয়। শুধু মেজ ভাইয়াই জানতেন। কিন্তু তিনি চলে গেছেন।
: তাহলে?
: আমি অবশ্য একটা উপায় বাৎলে দিতে পারি।
: কি উপায়?
ছোট মামা মনে মনে কি যেন একটা হিসেব করলেন। তারপর বললেন: হ্যাঁ, কনের বাড়ীর স্টেশন হল ঢাকা থেকে বারোটা স্টেশনের পরে। তুই যদি গুণে গুণে বারোটা স্টেশন পরে নামতে পারিস, তাহলেই চলবে।
: নিশ্চয়ই পারব।
: স্টেশনে নেমে তুই একটা রিকসা নিয়ে বলবি যে, 'চৌধুরীদের বাড়ীতে যাব'। ব্যস, তাহলেই চলবে। চৌধুরীরা ওখানকার নামকরা লোক। সবাই ওঁদের চেনে।
: কুচ পরোয়া নেই। আমি নিশ্চয়ই যেতে পারব।
মেজো মামার বিয়ের তিন দিন আগে বাড়ীশুদ্ধ সবাই চলে গেল। শুধু আমিই রইলাম। যাবার সময় সবাই উপদেশ দিয়ে গেল, ভাল করে পরীক্ষা দিতে।
আমার পরীক্ষা শেষ হয়ে গেল। আজ সতেরো তারিখ। আজই সাড়ে বারোটার ট্রেনে বিয়েবাড়ী যাব। অপেক্ষা করে করে আর তর সইছে না। শেষ পর্যন্ত সাড়ে এগারোটায় বাড়ী থেকে বের হলাম। তারপর ধীরে-সুস্থে স্টেশনে উপস্থিত হলাম। ভেবেছিলাম গাড়ী ছাড়তে এখনও দেরী। ওমা। গিয়ে দেখি গাড়ী চলতে আরম্ভ করেছে। লাগেজের অবশ্য বালাই নেই। কাঁধে ঝুলানো একটা এয়ার ব্যাগ। লাফ দিয়ে গিয়ে গাড়ীতে উঠলাম। আমি যে কামরাতে উঠলাম, সে কামরায় অবশ্য ভিড় বেশী নেই। একজন ভদ্রলোক আমাকে বললেন: এই যে এখানে বস খোকা, এখানে বস।
আমি তাঁর পাশেই বসে পড়লাম। হঠাৎ তাঁর ঘড়ির দিকে নজর পড়তেই আশ্চর্য হলাম, আরে এ যে মোটে বারোটা বাজে। গাড়ী ছাড়ার কথা তো সাড়ে বারোটায়। আমি একটু আমতা বন্ধ, মানে বলছিলাম কি আপনার ঘড়িটা আমতা করে বললাম: আপনার ঘড়িটা কি--ঠিকমত চলছে তো?
: কি বললে?
: আজ্ঞে আপনার ঘড়িটার কথা বলছিলাম।
: ঘড়িটার কথা? তা আমার ঘড়িটা যেই দেখে সেই কিছু না বলে পারে না। আমার ছেলে মিউনিকে থাকে কিনা, তাই সেখান থেকেই ঘড়িটা পাঠিয়েছে। খুব ভাল ঘড়ি। যে দেখে সে-ই প্রশংসা করে। ঘড়িটা তোমার কাছে ভাল লেগেছে নাকি? চেনটা দেখেছ ত। কি সুন্দর। এখানে এসব জিনিস টাকা ছাড়লেও পাবে না।
: আজ্ঞে আমি সে কথা বলছি না।
: তবে কি বলছিলেন?
: মানে আপনার ঘড়িটা ঠিক মত টাইম দেয় তো।
: হুঁ, হুঁ, হাসালে দেখছি। এ ঘড়ি যদি ঠিকমত টাইম না দেয় তবে কোন্ ঘড়িতে ঠিক মত টাইম পাওয়া যাবে বলতে পারো?
: তা তো বটেই, ততো বটেই।
তবে?
: আপনার ঘড়ি তো ঠিকমত টাইম দেবেই, নিশ্চয়ই দেবে, দেওয়াতো উচিত। তবে ঘড়িটা যদি মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়, কি বলে সেটা যদি না চলে, কিংবা বলতে পারেন আপনি যদি ঘড়িটা না চালান।…
: আমি ঘড়ি চালাতে যাবো কেন? ঘড়িটা নিশ্চয়ই ঘোড়া নয়, তা হলে ঘড়ি চালানোর প্রশ্নই ওঠে না। ঘোড়ার পিঠে না হয় বসা যায়, কিন্তু ঘড়িটাতো আমার পিঠেই, থুরি আমার হাতেই অবস্থান করে। আর এখনতো ঘোড়ার চেয়ে মোটর চালনাই ভালো, কিংবা ঘোড়ার বিকল্প বাইকেও চাপতে পারো।
: আজ্ঞে আমি বাইক্ চাপতেও পারি না, আর ওসবে চড়ার ইচ্ছাও নেই। আর ঘোড়াকে তো মোটেই পছন্দ করি না। আমার মনে হয় ঘোড়াও আমাকে নিশ্চয়ই পছন্দ করে না। কারণ একবার ঘোড়ার পিঠে চাপতে গিয়ে ঘোড়া এরকম রেগে গিয়েছিল যে, আমার মনে হল ওর পিঠে চড়াটাই ঘোড়া বোধ হয় পছন্দ করল না। আর তার ফলে রেগে গিয়েও যে ব্যাপার ঘটাল তাতে আমার সাড়ে তেত্রিশ ঘটা বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিল। তাই বুঝতেই পারছেন ওসব ঘোড়া-টোড়া চড়া আমি মোটেই পছন্দ করি না।
তা বাপু তুমি যেটায় চড়তে পছন্দ করো না সেটায় আমায় চড়তে বলছ কেন?
: : কই আমি তো আপনাকে ঘোড়ায় চড়তে কখনো বলিনি শুধু আপনার ঘড়ির টাইমটা
: জানতে চেয়েছিলে। তাতো দেখতেই পাচ্ছ বারোটা বেজে এই দু'তিন মিনিট।
: হাঁ তা তো দেখতেই পাচ্ছি, তবে গাড়ী তো ছাড়ে সাড়ে বারোটায়। তাই ভাবছিলাম আপনার ঘড়িটা বোধ হয় চলছে না।
: না তো, গাড়ী তো বারোটায় ছাড়ে। আমি এ গাড়ীতে প্রায়ই আসা-যাওয়া করি, আমি ভাল করেই জানি এ গাড়ী বারোটায় ছাড়ে।
আমি ভাবলাম
লগইন করুন? লগইন করুন
03 Comments
Karla Gleichauf
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
M Shyamalan
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment
Liz Montano
12 May 2017 at 05:28 pm
On the other hand, we denounce with righteous indignation and dislike men who are so beguiled and demoralized by the charms of pleasure of the moment