সেকালে ও একালে অনেকে ভূত দেখিয়াছেন আবিষ্কার করিয়াছেন। স্পিরিচুয়ালিস্টরা ভূতের সঙ্গে কারবার করেন। কিন্তু কেহ ভূতের সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা শুনি নাই। বৈজ্ঞানিকেরা না কি ভূত মানেন না; কিন্তু তাঁহারা ভূতের সৃষ্টি করিতে পারেন। পূর্বপ্রসঙ্গে পঞ্চ ভূতের কথা বলিয়াছি; ঐ পঞ্চ ভূত দার্শনিক পণ্ডিতের সৃষ্টি। বর্তমান প্রসঙ্গেও ভূতের কথা পাড়িতে হইবে; উহা বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতের সৃষ্টি। জেমস ক্লার্ক মাক্সওয়েল গত শতাব্দীতে কেম্ব্রিজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন। তিনি এরকম ভূতের কল্পনা করিয়া গিয়াছেন; সেই ভূতের কথা এই প্রসঙ্গে উঠিবে।

প্রদীপ জ্বালিয়া আমরা রাত্রির অন্ধকার দূর করিয়া থাকি, এবং তজ্জন্য কাঠ তেল চর্বি পোড়াইয়া আলো জ্বালি। একালের লোকে গ্যাস পোড়ায়, অথবা কয়লা পোড়াইয়া বা দস্তা পোড়াইয়া বিজুলি বাতি জ্বালায়। মানুষে মনে করে, এ একটা প্রকাণ্ড বাহাদুরি। অগ্নির আবিষ্কারের মত এত প্রকাণ্ড আবিষ্কারই বুঝি আর কখনও হয় নাই। সূর্যাদেব সন্ধ্যার পর সরিয়া পড়িয়া আমাদিগকে আলোকে বঞ্চিত করেন; কিন্তু আমরা কেমন সহজ উপায়ে ঘোর অন্ধকারেও আমাদের কাজ সারিয়া লই। মানুষকে ফাঁকি দেয়া সহজ কথা নহে। সূর্য্যদেব আমাদিগকে ফাঁকি দিতে চান। আমরা কিন্তু দিয়াশলাই ঠুকিয়া আলো জ্বালি, এবং হাজার হাজার মশাল ও প্রদীপ জ্বালিয়া ঘর ও নগর আলোকিত করিয়া তাহার পাল্টা দিই।

প্রকৃতিকে এইরূপে ফাঁকি দিয়া আমরা উৎফুল্ল হই। কিন্তু আমাদের মধ্যে যাঁহারা দূরদর্শী ও সূক্ষ্মদর্শী, যাঁহাদের নাম বৈজ্ঞানিক, তাঁহারা সম্প্রতি প্রশ্ন তুলিয়াছেন, আমরা ফাঁকি দিতেছি, না ফাঁকি পড়িতেছি?

প্রত্যেক দীপশিখা প্রতি মুহূর্তে বৈজ্ঞানিককে স্মরণ করাইয়া দেয়, তুমি বড় নির্বোধ, অথবা তোমার ভবিষ্যতের চিন্তা আদৌ নাই; তোমার চোখের উপর এত বড় সর্ব্বনাশটা ঘটিতেছে; তাহার নিবারণে তোমার আজ পর্যন্ত ক্ষমতা জন্মিল না: ধিক্ তোমার জ্ঞানগর্ব্বকে, ধিক্ তোমার বৈজ্ঞানিকতাকে। দীপশিখার এই নীরব বাণী বৈজ্ঞানিকের হৃদয়ে তীব্র শেলের ন্যায় বিদ্ধ হয়।

কথাটা হেঁয়ালির

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion