বাঘ বাঘ

ছোট্ট মফস্বল শহর। তাই খবরটা ছড়িয়ে পড়তে বেশীক্ষণ লাগল না। পিন্টুরা তখন বাড়ীর সামনের মাঠটায় খেলা করছিল। তারাও খবরটা শুনেছে। যে সার্কাস পার্টিটা এসেছে, তাদের একটা বাঘ খাঁচা থেকে পালিয়েছে। খবরটা শুনে সারা শহরে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছে। যে যার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। রাস্তাঘাটে থাকতে কেউ আর সাহস করছে না। কে জানে কখন কোন্দিক থেকে এসে হঠাৎ করে ঘাড়টা ভেঙে দেবে। তাই লোক চলাচল খুব কম। শহরের সর্বত্রই যেন একটা চাঞ্চল্য। একটা চাপা বিভীষিকা।

কিন্তু পিন্টু ও তার সঙ্গী-সাথীরা এতে মোটেই ভয় পেল না। তারা যেন একটু খুশীই হয়ে উঠেছে। পিন্টু শওকতকে ডেকে বলল: এতদিন পরে একটা সত্যিকারের এডভেঞ্চারের স্বাদ পাওয়া যাবে, কি বলিস?

শওকত বলল: কিন্তু কি করে পাবে, যদি বাঘটা এদিকে না আসে?

: আসবে না মানে, নিশ্চয়ই আসবে, আসতে হবেই।

: কেন?

আরে এটা বুঝছিস না শহরের সবাইতো বাঘের ভয়ে ঘরে গিয়ে লুকিয়েছে। এখন বাঘটা তো খাঁচা ভেঙে পালিয়েছে মানুষ খাবার জন্যে।

: মানুষ খাবার জন্যে?

: নয় তো কি? নইলে তো বাঘটা খাঁচার ভিতর আরামেই থাকতে পারত। কত ভাল ভাল খাবারই পেত। তবে কোন্ দুঃখে সে খাঁচা ছেড়ে পালাল?

: তাই তো?

: তাই তো মানে! এখনও বুঝতে পারছিস না, বাঘটা কেন খাঁচা ছেড়ে পালাল? আরে বোকা মানুষ খাবার জন্যে, স্রেফ মানুষ খাবার জন্যে। খাঁচায় থাকলে তো আর মানুষ খেতে পারত না। তাই পালাল।

: কিন্তু তাই বলে বাঘটা এদিকে আসতে যাবে কেন?

: কারণ শহরের সব মানুষ বাঘের ভয়ে গিয়ে ঘরে লুকিয়েছে। বাঘটা এখন আর মানুষ পাবে কোথায় যে খাবে? শুধু আমরাই বাইরে রয়েছি। সুতরাং আমাদের খেতে আসবে। শওকত আঁতকে উঠল: এ্যাঁ বলিস কি। তবে তো আমাদের এখনই বাড়ী যাওয়া উচিত। খামাখা পথে-ঘাটে বেঘোরে প্রাণ দিয়ে লাভ কি?

শওকত যাবার জন্যে উঠে দাঁড়াল। পিন্টু এক হেঁচকা টানে তাকে বসিয়ে দিয়ে বলল: তুই তো একদম ভীতু। বাঘ যদি আসেই তবে ভয় কি। আমরা দুজনে মিলে যদি একটা বাঘকেই মারতে না পারি তবে-

কথাটা পিন্টু একটা তুড়ি মেরে শেষ করল। শওকত এতক্ষণে যেন মনে একটা সাহস পেল।

আস্তে আস্তে বলল: কিন্তু বাঘটা আমাদের খোঁজ পাবে কিভাবে?

: বাঘটা তো আর এক জায়গায় বসে থাকবে না। সে এত কষ্ট করে খাঁচা থেকে বেরোল মানুষ খাযায় জন্যে, আর সেই মানুষেরই কিনা পাত্তা নেই, সব গিয়ে লুকিয়েছে ঘরের মধ্যে, এটাই বা কি করে বাঘ সহ্য করবে। তার এত পরিশ্রম কি বৃথাই যাবে? তখন সে মানুষ খাবার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠবে, মানুষের জন্যে সারা শহর চষে ফেলবে। তখন নিশ্চয়ই আমাদের দেখা পাবে।

শওকত ভয়ে ভয়ে বলল: তবে বাঘ বোধহয় রাত্রেই আসবে। দিনে বাঘ আবার বেরোয় না।

: বেরোয় না মানে? একশবার বেরোয়, হাজারবার বেরোয়। কিছুক্ষণের ভিতরেই আসবে দেখবি। কিংবা এখনি এসে হয়তো তোর ঘাড়ে লাফিয়ে পড়তে পারে।

শওকত ভয়ে ভয়ে চারদিকে চেয়ে দেখল। কিন্তু বাঘের কোন চিহ্নই মিলল না দেখে একটু আশ্বস্ত হল। তারপর নিজের ঘাড়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলল: আমার ঘাড়ে কেন, তোর ঘাড়েও তো লাফিয়ে পড়তে পারে।

: আমার ঘাড়ে, না, না, আমার ঘাড়ে পড়বে কেন? তোর ঘাড়েই পড়বে, তোর ঘাড়ে পড়লে একটু সুবিধে হয়।

: সুবিধে। কিসের সুবিধে।

: বাঘকে মারার সুবিবে। আমার ঘাড়ে যদি বাঘ এসে পড়ে, তবে তাকে মারার সুযোগ পাব না। কিন্তু তোর ঘাড়ে এসে পড়লে, আমি বাঘকে মারতে পারব, মানে তোর ঘাড়টা মটকাতে বাঘের যতক্ষণ লাগবে, ততক্ষণে আমি তৈরী হয়ে বাঘটাকে মেরে ফেলতে পারব।

: কিন্তু বাঘটা যদি আমার ঘাড়টা মটকে দেয় তবে তো বাঘ মারার আগে আমিই মরে যাব।

: বেঁচেও যেতে পারিস, বলা যায় না। আজকাল অনেক রোগের অনেক চিকিৎসা বেরিয়েছে। তোর মচকানো ঘাড়টা হয়তো ভাল হয়ে যেতে পারে।

শওকত ভয়ে ভয়ে বলল: কিন্তু বাঘের লালা গায়ে লাগলে নাকি মানুষ আর বাঁচে না।

: তা অবশ্য ঠিকই। তা' না হয় তুই। মরেই গেলি, তবুও তো বাঘ মারার জন্য লোকে আমার অনেক সুখ্যাতি করবে।

শওকত লাফিয়ে উঠে বলল: বারে, আমি এদিকে বাঘের হাতে প্রাণ দেবো, আর লোকে সুখ্যাতি করবে তোর।

: না, না, তোরও সুখ্যাতি করবে বৈকি? তুই এভাবে আত্মদান করবি আর

: কিন্তু যদি না করে-

: করবে, নিশ্চয়ই করবে। আর যদি না করে তবে তুই আমাকে কষে সাড়ে সতেরোশ' থাপ্পড় লাগাস। যা, হ'ল তো?

: কিন্তু আমি তখন তোকে পাবো কোথায়। আমি যে মরে ভূত হয়ে থাকব।

: কেন তুই মরে ভূত হয়ে আমাকে এসে মারবি।

: কিন্তু ভূত হলে তো তুই আমাকে আর দেখতে পাবি না। যদি দেখত্ত্বেও পাস তবে আমার কঙ্কাল দেখে আমাকে চিনতে পারবি না।

: না চিনলে আর কি হবে? তুই তোর থাপ্পড় লাগিয়ে যাবি।

: কিন্তু ভূতের হাতে একটা থাপ্পড় খেলেই তো তুই মরে যাবি। তখন বাকি সতেরোশ' ঊনপঞ্চাশটা খায়ড় দিস।

: তবে না হয় আমি নিজে আত্মহত্যা করে মরে পরলোকে গিয়ে তোর সাথে দেখা করব। তখন তুই তোর থাপ্পড় দিস।

এমন সময় পিন্টুর বড় ভাই আনোয়ার এসে সেখানে বলল: আরে পিটু তুই এখানে। আর জামি তো তোকে খুঁজে খুঁজে হয়রান। তাড়াতাড়ি বাসায় চল। শহরে বাঘ বেরিয়েছে।

পিন্টু বলল: আসুক না বাঘ। বাঘকে আমি ভয় পাই না।

: বুঝেছি, আর সাহস দেখাতে হবে না। আব্বা বলেছেন বাসায় যেতে।

পিন্টুকে তার ভাই আনোয়ার এক রকম টেনেই বাসায় নিয়ে চলল। বাসায় ঢুকতেই পিটুর দাদীর সাথে দেখা। দাদী বলল: হাঁরে পিন্টু, এ সময় কি বাড়ীর বাইরে থাকতে আছে? বাঘের ভয়ে সবাই ঘরে ফিরে গিয়েছে আর তুই কিনা এখনও বাইরে?

পিন্টু বলে উঠল: তোমরা সবাই এক একটা আস্ত ভীতু। একটা বাঘ বেরিয়েছে বলে কিনা ঘরের কোণে গিয়ে লুকোতে হবে। এ শহরের লোকগুলোও যেমন ভীতু, দরজা আটকে সবাই ঘরে গিয়ে বসে রয়েছে।

আনোয়ার বলে উঠল: আরে রাখ। তোকে আর বাহাদুরি দেখাতে হবে না। তুই তো কোনদিন আর বাঘ দেখিসনি, তাই একথা বলছিস।

পিন্টু বলল: আরে খুব বুঝেছি, আর বাহাদুরি করতে হবে না, সেবার বড় মামার সাথে বাঘ দেখতে গিয়ে তোমার কি অবস্থাটা হয়েছিল, মনে নেই নাকি

সেই সময় পিন্টুর মেজো আপা সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। পিন্টুর কথা শুনে দাঁড়িয়ে বলল: কি অবস্থা হয়েছিল রে?

পিটু বলল: তোমার মনে নেই আপা, সেই যে বড় মামার সাথে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে গিয়ে ভাইয়া একেবারে ফ্ল্যাট হয়ে গিয়েছিল।

মেজো আপা টিটকিরী দিয়ে বলল: কিন্তু এবার দেখিস পিন্টু, ভাইয়া বাঘকেই ফ্ল্যাট করে

দেবে। কি বল ভাইয়া, ঠিক বলছি না?

আনোয়ার এবার ক্ষেপে উঠল: খবরদার মিতা, বেশী ডেপোমি করবি না। এবার দেখিস আমি বাঘ মারি কি না মারি।

মেজো আপা হাসতে হাসতে বলল: আমিও তো তাই বলছি। তুমিই এবার বাঘটা মারবে।

এমন সময় সেখানে আব্বা এসে উপস্থিত হলেন। পিন্টুকে দেখে বললেন: পিটু, বাড়ীর বাইরে আর যেও না। শহরের অবস্থা এখন আর নিরাপদ নয়।

তারপর আনোয়ারের দিকে

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).


Get Newsletter

Featured News

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion

Editors Choice