মেঘনার মোহানায় চর যে কখন কোথায় পড়ে, তার ঠিক-ঠিকানা নেই। আজ যেখানে জল, কাল সেখানে দেখা গেল চড়া পড়ে বালি ধূ-ধূ করছে; কাল যেখানে দেখেছি চরে উলু-ঘাস, বালু-হাঁস; বছর ফিরতে সেখানে দেখলেম চরও নেই, হাঁসও নেই—অগাধ জল থৈথৈ করছে! এক-রাতের মধ্যে হয়তো নদীর স্রোত ফিরে গেল—জলের জায়গায় উঠল বালি, বালির জায়গায় চলল জল।

বাগদী-চরে হাঁসেরা যখন উড়ে বসল, তখন চরের চারদিকে জল—ডাঙা থেকে না সাঁতরে চরে আসা মুশকিল। অপার মেঘনার বুকে একটুকরো ময়লা গামছার মতো ভাসছিল চরটি, কিন্তু রাত হতেই জল ক্রমে সরতে লাগল, আর দেখতে-দেখতে সরু এক-টুকরো চড়া, ডাঙা থেকে বাগদীচর পর্যন্ত, একটি সাঁকোর মতো দেখা দিলে।

চাঁদপুরের জঙ্গলে বসে খেঁকশেয়ালী হাঁসের দলের উপরে নজর রেখেছিল; কিন্তু চকা-নিকোবরকে সে চেনে; এমনি বেছে-বেছে নিরাপদ জায়গায় চকা তার দল নিয়ে রাত কাটাত যে এপর্যন্ত তার দলের একটি হাঁস শিয়ালে ধরতে পারেনি। মেঘনার পুব-তীরের জঙ্গল ভেঙে রাতের বেলায় খেঁকশেয়ালী শিকারে বেরিয়েছে, এমন সময় জলের বুকে কুমীরের পিঠের মতো সরু সেই চরটির দিকে চোখ পড়ল। এক লাফ দিয়ে সে চর ডিঙিয়ে পায়ে-পায়ে অগ্রসর হল। খেঁকশেয়ালী প্রায় হাঁসের দলে এসে পড়েছে, এমন সময় ছপ-করে একটা ডোবার জলে তার পা পড়ল; আমনি চকা চমকে উঠে ডাক দিলে—“কেও?” আর সব হাঁস ডানা ঝেড়ে উড়ে পড়তে আরম্ভ করলে; সেই অবসরে তীরের মতো ছুটে গিয়ে শেয়াল লুসাই-হাঁসের ডানা কামড়ে ধরে হিড়-হিড় করে সেটাকে ডাঙার দিকে নিয়ে চলল।

সব হাঁসের সঙ্গে ভয় পেয়ে খোড়া হাঁসও ডানা ছাড়িয়ে আকাশে উঠল; কেবল রিদয় হাঁসের ডানা থেকে ঝুপ-করে মাটিতে পড়ে চোখ-রগড়ে চেয়ে দেখলে অন্ধকারে সে একা, আর দূরে একটা কুকুর হাঁস ধরে পালাচ্ছে। অমনি রিদয় হাঁসটা কেড়ে নিতে শেয়ালের সঙ্গে ছুটল। মাথার উপর থেকে খোঁড়া হাঁস একবার হাক দিলে—“দেখে চল!” কিন্তু রিদয় তখন হৈ-হৈ করে ছুটেছে। রিদয়ের গলা পেয়ে লুসাই কতকটা সাহস পেলে, কিন্তু বুড়ো-অঙুলের মতো ছেলে কেমন করে শেয়ালের মুখ থেকে তাকে বাঁচাবে, এটা তার বুদ্ধিতে এল না। এত দুঃখেও লুসায়ের হাসি এল। সে প্যাঁক-প্যাঁক করে হাসতে-হাসতে চলল।

 মাথার উপরে খোঁড়া হাঁস রিদয়ের সঙ্গে-সঙ্গে চলেছে; তার ভয়—পাছে রিদয় খানায়-ডোবায় পড়ে হাত-পা ভাঙে। কিন্তু যক্ হয়ে অবধি খুব অন্ধকার রাতেও যকের মতো রিদয় দেখতে পাচ্ছে। খানা-খন্দ লাফিয়ে দিনের বেলার মতো রিদয় সহজে ছুটেছে আর চেঁচাচ্ছে—“ছেড়ে দে বলছি, না হলে এক ইট মেরে পা খোঁড়া করে দেব!” কে তার কথা শোনে? শেয়াল এক লাফে চড়া ছেড়ে পারে উঠে দৌড়ে চলল। রিদয়ও চলেছে হাঁকতে-হাঁকতে—“মড়াখেকো-কুকুর কোথাকার! ছাড় বলছি, না হলে মজা দেখাব।”

 চাঁদপুরের খেঁকশেয়াল যার নাম, আসামের জঙ্গলে হেন পাখি নেই যে তাকে জানে না। সে শহরে গিয়ে কতবার মুরগি, হাঁস ধরে এনেছে। ‘তাকে মড়াখেকো-কুকুর’ বলে এমন সাহস কার? শেয়াল একটু থেমে যেমন ঘাড় ফিরিয়ে দেখেছে, অমনি রিদয় গিয়ে তার ল্যাজ চেপে পিঠে একটা কিল বসিয়ে দিলে। মানুষটি বুড়ো-আংলা, তার কিলটি কত বড়ই বা? শেয়ালের পিঠে একটা যেন বেদানা-বিচি পড়ল! কিন্তু মানুষের মতো গলার স্বর শুনে শেয়াল সত্যি ভয় পেলে; সে ল্যাজ তুলে বনের মধ্য দিয়ে পালিয়ে চলল; আর রিদয় তার ল্যাজ ধরে টিকটিকির মতো ঝুলতে-ঝুলতে চলল—উলু-ঘাসের মধ্যে দিয়ে গা-ঘেঁষড়ে। কাঁকড়ার মতো ল্যাজে কি কামড়ে রয়েছে, সেটা দেখবার শেয়ালের অবসর ছিল না, সে একেবারে নিজের গর্তর কাছে এসে দাড়িয়ে, মুখ থেকে হাঁসটা নামিয়ে, সেটার বুকে পা দিয়ে দাড়াল, তখন তার চোখ পড়ল ল্যাজে-গাঁথা বুড়ো-আংলার দিকে! এই টিকটিকির মতো ছেলেটা-ইনি চাঁদপুরী শেয়ালকে জব্দ করবেন, ভেবে শেয়াল ফ্যাক করে মুখ-ভেংচে

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

03 Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).

Get Newsletter

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion