ডাকু

বেড়ালের বাচ্চাটা খুঁত খুঁত করে কাঁদছিল।

ওর মা জিজ্ঞাসা করল, কিরে, অমন করে কাঁদছিস কেন? কি, হয়েছে কি?

বা রে, কাঁদব না? আমার খিদে পেয়েছে যে।

ও মা, খিদে পেয়েছে তো খা। কান্নাকাটির কি হয়েছে? তোকে নিয়ে আর পারি না বাপু, খুত খুত আর খ্যাঁত খ্যাঁত দিন রাত লেগেই আছে। যা, কাল রাত্তিরে দুটো ইঁদুর মেরে খাটের তলায় রেখে দিয়েছি। ওর মধ্যে বাচ্চা ইঁদুরটা খা গিয়ে। বড়টা কিন্তু খাসনে। ও তুই হজম করতে পারবি নে। যা তোর শরীর, পেটের অসুখ তো লেগেই আছে।

বাচ্চা যেমন ছিল তেমনি বসে রইল। মার কথাটা যে ওর মনে লাগে নি। একটু বাদেই সে আবার তেমনি করেই খুঁত খুুঁত করতে লাগল।

আরে, আবার কি হলো? কান্না কিসের জন্য? কই, খেতে বললাম, খেলি নে যে?

বাচ্চা নাকে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি রোজ রোজ ইঁদুর খেতে পারি না। আমার ভালো লাগে না।

ও মা, ছেলের কথা শোনো একবার। ইঁদুর খাবি না তো খাবি কি শুনি? ইঁদুরের মতো মিঠা কি? যাও, লক্ষ্মী সোনা, খাও গিয়ে।

না, মিষ্টি খাব আমি। এ বাড়ির ছেলেমেয়েগুলো রোজ রোজ গুড়, চিনি, পায়েস, পিঠে—আরও কত কি কি মিষ্টি খায়, তুমি কি কিচ্ছু দেখ না? কত দিন হয়ে গেল তুমি আমাকে একটা মিষ্টি খেতে দাও না।

ওর মার মনটা একটু ভার হয়ে এলো। আহা, তাই তো, ছেলেমানুষ, এটা ওটা তো খেতে চাইবেই। এই তো খাওয়ার সময়। কিন্তু মিষ্টি সে কেমন করে এনে দেবে। তার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠল।

সে বলল, ও আমার কপাল, মিষ্টিই যদি খাবি, তবে বেড়ালের ঘরে এসেছিস কেন? এ সব তো আমাদের জন্য নয়। ভালো ভালো জিনিস সব কিছু মানুষেরাই খায়। এইটাই নিয়ম। পিরথিমী যেদিন থেকে ছিষ্টি হয়েছে, সেদিন থেকে এই নিয়মই চলে আসছে।

বাচ্চাটা পেট-রোগা হলে কি হবে, তেজ আছে। একেবারে ফোঁস করে তেড়ে উঠল। এ্যাঁ, বেড়াল বলে আমরা যেন মানুষ নই। ওরাই সব খাবে, আর আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব? ও চলবে না। আমি আজ খাব না। কিচ্ছু খাব না। মিষ্টি আমাকে এনে দিতেই হবে, যেখান থেকে পারো।

ইস্, কি জেদী ছেলে বাবা। খেলো না, কিছুতেই খেলো না। দুপুর গেল, বিকাল গেল, রাত গেল, তবুও না। মা কত করে বোঝায়—উহুঃ কিছুতেই না। সে মরে গেলেও খাবে না। বেচারা মা কি আর করবে! বাচ্চাকে ফেলে কি করে খায়, সারাদিন সারারাত তার পেটেও কিছু পড়ল না।

পরদিন রাত ভোর হলে বেড়াল আর তার বাচ্চা রোজকার অভ্যাস মতো হাই তুলে একটা বুকডন দিয়ে নিল। আর অমনি সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিদেয় পেট চোঁ চোঁ করে উঠল।

বেড়াল বলল, তুই বোস, আমি বাজারটা একটু ঘুরে আসি, দেখি কিছু পাওয়া যায় কিনা।

বাচ্চা আনন্দে লাফিয়ে উঠল: আমি তোমার সঙ্গে যাব মা।

হ্যাঁ, কাল সারাদিন রাত্তিরে কিচ্ছু খাস নি, তুই যাবি কি করে? তুই থাক বাবা, আমি যাব আর আসব।

বেড়াল বাজারে গেল। ময়রা তখন সবেমাত্র দোকানের পাট খুলেছে। বেড়াল বলল, ময়রা দাদা, আমার বাচ্চাটা বায়না ধরেছে মিষ্টি খাবে। অবুঝ শিশু বোঝে না তো, কাল রাগ করে সারা দিন কিচ্ছু খায় নি। আমাকে কিছু মিষ্টি দাও।

ময়রা বলল, মিষ্টি নিবি তো পয়সা দে আগে।

ও মা, আমি গরীব বিড়ালিনী, আমি পয়সা কোথায় পাবো গো। ময়রা দাদা, তোমার ভাগনেটার কথা মনে করে এমনিতেই দুটো মিষ্টি দাও।

ভাগনে! ময়রা ক্ষেপে উঠল। বটে ভাগনে! একটা বেড়ালের বাচ্চা, সে কিনা তার ভাগনে, সাহস দেখ!

দাঁড়া দেখাচ্ছি মজাটা!

একটা চেলা কাঠ তুলে সে জোরসে ছুঁড়ে মারল। বেড়ালের মনে হলো তার পিঠটা যেন ভেঙ্গে গেছে। কিসের মিষ্টি, কিসের কি, ছুটতে ছুটতে একদম বাড়ি এসে হাজির।

বাড়িতে ফিরে এসে অবাক হয়ে দেখে বাচ্চা মহা ফূর্তিতে নেচে কুঁদে বেড়াচ্ছে। মাকে দেখে তার আনন্দ আর ধরে না। দেখামাত্রই সে লেজ তুলে ছুটে এসে তাকে ঘিরে ড্যাং ড্যাং করে নাচতে লাগলো আর গাইতে লাগলো—

মিষ্টি পেলাম মিষ্টি পেলাম,

চাকুম চুকুম খাবার খেলাম,

ক্যাবলা খোকায় খাবলা মেরে

সুড়ুৎ করে পালিয়ে এলাম।

বাচ্চার কাণ্ড দেখে মা তো অবাক। ক্ষিদের জ্বালায় পাগল হয়ে গেল নাকি? ও সব আবোল তাবোল কি-সব বকছে?

হ্যাঁ রে, কোথায় পেলি মিষ্টি? কে দিয়েছে?

বাচ্চা নাচ গান থামিয়ে এক টুকরো মায়ের মুখে তুলে দিয়ে বলল, আগে খাও, বলছি পরে।

আঃ, কি সুন্দর গন্ধ! আর ক্ষিদেও লেগেছিল প্রচুর। মুখে দিতে দিতেই গলে গেল।

আহা, কি তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গেল রে? বেড়াল তার জন্মেও এমন খাবার খায় নি।

বাচ্চা বলল, খুব ভালো, না মা?

উঃ, খুব ভালো। কোথায় পেলি বল দেখি?

কোথায় পেলাম? শোন তবে। এ বাড়ির ছোট্ট ছেলেটা খাচ্ছিল বসে বসে। আমি গিয়ে বললাম, এই ছেলে, একা একা খাচ্ছিস কেন রে? আদ্ধেক আমাকে দে, আদ্ধেক তুই খা। আমার কথা শুনে ছেলেটা চেঁচিয়ে উঠল, ম্যা!

মাকে ডাকা হচ্ছে? দাঁড়া, দেখাচ্ছি মজা। সঙ্গে সঙ্গেই ওর দু’গালে দুটো চড় বসিয়ে দিয়ে খাবারটা কেড়ে নিয়ে পালিয়ে এলাম। তখন সেই ছেলেটা ষাঁড়ের মতো গলায় চেঁচাতে লাগল, ভ্যাঁ।

এ্যাঁ, করেছিস্ কি হতভাগা! চোর ছ্যাচ্চোর বদনাম ছিল না আমার কোনো দিন। শেষকালে তুই আমার নাম ডোবালি? পরের জিনিস না বলে নিতে আছে? ছি ছি ছি।

বাচ্চা জবাব দিল, হ্যাঁ, না বলে বুঝি? আমি তো বলেই নিয়ে এলাম। চাইলাম তো দিল না কেন? আমাকে দেখিয়ে খাবে—আহ্লাদ!

মা গম্ভীর হয়ে বলল, এ সব ভালো নয় বাছা। ভালো বেড়ালেরা এমন কাজ কক্ষনো করে না।

বাচ্চা বলল, জোর করে না নিয়ে এলে ও বুঝি আমাকে দিত? বেশ করেছি, এনেছি। আরও আনব। রোজ আনব। আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খাবে—আহ্লাদ। বলতে বলতে হঠাৎ ওর একটা কথা মনে পড়ে গেল। সে আর সব কথা ভুলে গিয়ে চেঁচিয়ে উঠল: ও মা, বা রে, বাজার থেকে মিষ্টি আনতে গিয়েছিলে। কি নিয়ে এলে আমার জন্য? দাও, এক্ষুণি দাও।

ওর মার মুখে আর কথা নেই। বাচ্চাকে কি বলে এখন বুঝ দেবে? এত করে সে মিনতি করল, কিন্তু একটা কিছুও তো দিল না হতভাগা ময়রাটা। দিল তো না-ই, উঃ তার উপর কি মারটা না মারল! ওই কথাটা মনে হতেই পিঠের সেই বেদনাটা বিষম টনটন করে উঠল।

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).


Get Newsletter

Featured News

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion

Editors Choice