তোরা সবাই সুখে থাক

এক বাঘ। বাঘ কি বাঘ, প্রকাণ্ড বড় বাঘ। এত বড় বাঘ কেউ কোনোদিন দেখে নি। তার চোখ দুটো, ও বাবা! তাঁর দাঁতগুলো, ওরে মা! দেখলে পরে জন্তু জানোয়ার ভয়ে আর কেউ নড়তে চড়তে পারে না। আর তখন বাঘ তাদের ঘাড় ভেঙ্গে খায়।

বনের যত প্রাণী সবাই তার ভয়ে থর থর করে কাঁপে। কোনো সংসারে সুখ নেই। বাচ্চা হরিণের মা-টা ডোবার ধারে জল খেতে গিয়েছিল। খুব তেষ্টা পেয়েছিল কিনা, চারদিকে তাকাবার মতো আর ফুরসত ছিল না। গলাটাকে লম্বা করে দিয়ে চক চক করে জল খাচ্ছিল। ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত্রি, আড়ালে আড়ালে কত কিছু থাকে, সব কিছু তো দেখা যায় না। সে কি আর ভাবতে পেরেছে, এত কাছে ডোবাটার ওপারে বাঘটা চোরের মতো ঝোপের আড়ালে বসে আছে? বাঘের চোখ জ্বলছে মশালের মতো। সে সব কিছুই দেখতে পাচ্ছে। মনের আনন্দে সে মনে মনে গান ধরল:

এক দুই তিন

এসেছে হরিণ

চার পাঁচ ছয়

আর দেরী নয়।

সত্যিই আর দেরী করল না। আস্তে আস্তে হামা দিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে সাড়া নেই, শব্দ নেই, এক লাফ। পড় তো পড়, এক্কেবারে হরিণটার পিঠের উপরে। আর কি পালাবার যো আছে?

হরিণটা আর্তকণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল। ওর মনে পড়ল, ওর ছোট্ট কচি বাচ্চাটার কথা। আর মনে পড়ল সেই সবুজের বনের বুকে মখমলের মতো ঘাসে বিছানো সুন্দর বাড়িটা। কিন্তু সে আর বেশী ভাববার সময় পেল না। বাঘটা তাকে টানতে টানতে ঝোপের ভেতর নিয়ে গেল।

বাচ্চাটাও মা’র পেছন পেছন এসেছিল। মাকে ছাড়া ও কক্ষণো থাকে না। মাত্র দুতিন মাস হলো এই পৃথিবীতে এসেছে। এখানকার অনেক কিছুই ও এখনও জানে না, বোঝে না। মায়ের কাছে দুষ্টু বাঘের গল্প শুনেছে অনেক দিন। মাঝে মাঝে সেই দুষ্টু বাঘের বিকট হাঁক-ডাক শুনে ভয় পেয়ে মায়ের বুকের তলায় গিয়ে লুকিয়েছে। কিন্তু এমন-যে হতে পারে তা ও কখনও ভাবতে পারেনি।

মাকে ছাড়া আর কখনও সে তো থাকেনি। এখন কেমন করে থাকবে? কোথায় থাকবে? সে খেতেও চায় না, শুতেও চায় না, সারা দিন কেবল মা-মা করে কেঁদে কেঁদে বেড়ায়।

পশু-পাখি যে তাকে দেখে সেই তার দুঃখে কাঁদে। কিন্তু শুধু তো হরিণ নয়, সমস্ত বন জুড়ে ঘরে ঘরে এই একই খবর। এই দুুষ্টু বাঘের পেটে কারু বাবা গেছে কারু মা গেছে, কারু বা ভাই-বোনেরা গেছে। তাই সব ঘরেই কান্নাকাটি। কিন্তু কিছু করবার যো নেই। বাঘের সঙ্গে কে পারে বলো? অত জোর কার আছে? হরিণের বাচ্চা কাঁদে, আর এই সমস্ত কথাই ভাবে। আর ওর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পড়ে। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত সে এমনি করে কেঁদে কেঁদে বেড়ায়। সেদিন রাত কাটল এক বট গাছের তলায়। বুড়ো-অথর্ব বট গাছ। কত-যে তার বয়স হয়েছে, কেউ সে কথা বলতে পারে না। সেই গাছের উপর থাকে ছোট্ট এক পাখি। ভোর হতেই সে শুরু করে দিল কিচির মিচির কিচির মিচির। কত-যে তার কথা। এত বলেও শেষ করতে পারে না। কিন্তু হঠাৎ হরিণের বাচ্চাটার দিকে চোখ পড়তেই তার কথা বন্ধ হয়ে গেল। আহা, এমন সুন্দর বাচ্চাটা! কি হয়েছে ওর? এমন করে কাঁদছে কেন?

সে ডেকে বলল, ও ভাই শোন, শোন:

সবুজ বনের ঘুম ভাঙ্গালো পাখির কল কল

সোনার আলো হাত বুলালো, আকাশে ঝলমল।

আজকে শুধু হাসির মেলা, দুঃখ কিছুই নাই

হরিণ ছানা হরিণ ছানা, কাঁদছ কেন ভাই?

হরিণ ছানা চমকে উঠে বলল, কে গো, কে তুমি আমায় ডাকছো?

ছোট পাখি বলল—

বনের পরী ঝুমুর ঝুমুর নাচছে যে পায় পায়

ফুলের কলি ঘোমটা খুলি নয়ন মেলে চায়।

ঝির ঝিরিয়ে বইছে হাওয়া মন করে চঞ্চল

এমন দিনে কেমন করে ফেলছে চোখের জল?

ও ভাই হরিণ ছানা, আমি তোমার বন্ধু ছোট্ট পাখি।

হরিণ ছানা বলল, এ সংসারে আমার বন্ধু কি কেউ আছে? যদি বন্ধু হও, তবে আমার দুঃখের কথা শোনো।

ছোট পাখি বলল, বল তুমি। আমি তো সেই কথাই শুনতে চাইছি।

হরিণ ছানা তখন তার সব কথা খুলে বলল। আর বলল, তুমি আমায় কাঁদতে মানা করছ, কিন্তু আমার এ কান্না তো থামবে না। তবে আমি যেদিন ওকে মারতে পারব শুধু সেই দিনই আমি হাসব। সব কথা শুনে ছোট্ট পাখি বলল, ওমা, তুমি কেমন করে ওকে মারবে? ও যে কত বড় বাঘ, কেউ ওর সঙ্গে পারবে না। সবাই ওকে ভয় করে।

হরিণ ছানা লাফিয়ে উঠল, আজই ওর সঙ্গে যুদ্ধ করব। ও আমার মাকে মারল কেন? কেন, কেন, কেন? ছোট পাখি বলল, না না, এ তুমি কি বলছ? এ হয় না। তার চেয়ে এসো আমরা দুজে মিলে বুদ্ধি করে দেখি কি করা যায়।

ওরা অনেক বুদ্ধি পরামর্শ করল, কিন্তু কিছুই ঠিক করতে পারল না।

ছোট পাখি বলল, আমার ছোট মাথা কিনা তাই তো বেশী বুদ্ধি ধরে না। দেখি, আমার দাদুকে একবার বলে দেখী।

হরিণ ছানা জিজ্ঞেস করল, তোমার দাদু কে?

ছোট পাখি তার কথায় কোন উত্তর না দিয়ে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে ডাকতে লাগল।

দাদু গো দাদু চোখ খোল

দেখছ না ঔ ভোর হলো।

এমন টুক টুকে ভোর বেলায় কি ঝিমোতে আছে। ছিঃ, সারা দুপুর পড়ে রয়েছে যত খুশি ঝিমিও। এখন আমার কথা শোনো।

বুড়ো বটগাছ হেসে বলল, বারে বা আমি বুঝি ঝিমোচ্ছি। কে বলল তোকে? আমি তোদের সব কথাই শুনছি। ছোট পাখি বলল, শুনেছ? বেশ গো, বেশ। এবার তবে বাঘটাকে মারবার বুদ্ধি যোগাও। বাঘটাকে না মারতে পারলে বন্ধু আমার হাসবে না। বন্ধু যদি না হাসে আমিও গান গাইতে পারব না। আর আমি যদি গান না গাই, রাত ভোর হবে না। সূর্য আর উঠবে না।

বটগাছ বলল, তবে তো বাঘটাকে মারতেই হবে। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আছে, কিন্তু তুই কি বাঘটাকে কোনো মতে ভুলিয়ে ভালিয়ে আমার তলায় নিয়ে আসতে পারবি? তা যদি পারিস্ তবে তার পরে যা করবার আমিই করব।

ছোট পাখি একটু ভেবে নিয়ে শেষে বলল, হ্যাঁ গো হ্যাঁ, সে আমি পারব। ঠিক এইটুকু, এইটুকুন বুদ্ধি আমার আছে, তার বেশী আর নেই।

গাছ বলল, তবে তোরা দুজনে মিলে খেলা কর গিয়ে। আমি সব যোগাড় যন্তর করছি।

পাখি ফুড়ুৎ করে উড়ে গিয়ে হরিণ ছানার পিঠের উপর গিয়ে বসলো।

পাখি চলে যেতেই বটগাছ ডাকল, কুটু, কুটু, কুট, কুট, কুট, কুট!

আয়রে আমার কুটকুটে

লেজ তুলে আয়, আয় ছুটে।

গাছের কোটরে থাকে কুটকুটে ইঁদুর। ডাক শুনেই সে তড়তড় করে ছুটতে ছুটতে এসে হাজির। এসেই বলে কি দাদু ভাই, ডাকছ কেন?

এই সক্কাল বেলা

ডাকছ কেন মেলা?

তোমার পাতায় পাতায় নেচে নেচে

করব নাকি খেলা?

ও দাদু ভাই, তোমার খেলতে সাধ হয়েছে?

গাছ বলল, হ্যাঁরে, আজ একটা নতুন রকম খেলা? হ্যাঁরে, কুটকুটে, তুই আমার এই মোটা ডালটা কেটে ফেলতে পারিস?

কুটকুটে বলল, খুুুুুুুুুব পারি। আমার দাঁতের ধার তুমি জানো না?

গাছ বলল, তা কি আর জানি না রে, তাই তো তোকে ডেকেছি। ডালটা কেটে ফেলতে ক’দিন লাগবে?

কুটকুটে ভেবে বলল, তিন

লগইন করুন? লগইন করুন

বাকি অংশ পড়তে,

সাবস্ক্রাইব করুন

প্রারম্ভিক অফারটি


লেখাটি পড়তে
অথবা

সাবস্ক্রাইব করে থাকলে

লগইন করুন

You Might Also Like

Comments

Leave A Comment

Don’t worry ! Your email address will not be published. Required fields are marked (*).


Get Newsletter

Featured News

Advertisement

Voting Poll (Checkbox)

Voting Poll (Radio)

Readers Opinion

Editors Choice